টিউমার কি
টিউমার হলো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে যখন দেহের কোন স্থানের টিস্যু অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন তাকে টিউমার বলে।
টিউমার কত প্রকার
আমাদের দেহে উৎপন্ন টিউমার গুলো প্রধানত দুই ধরনের ।
১/ বিনাইন টিউমার : এই টিউমার গুলো জটিল নয়। এই ধরনের টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
২/ ম্যালিগন্যান্ট টিউমার : এই টিউমার গুলো ঝুকিপূর্ণ। এগুলো থেকে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
টিউমার চেনার উপায়
দেহের কোথাও উৎপন্ন টিউমার কি নির্দোষ নাকি ঝুকিপূর্ণ তা চেনার উপায় হলো টিউমারের বৈশিষ্ট্য।
বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য
* একটি মাত্র আবরন দ্বারা এ টিউমার আবৃত থাকে
* ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়
* যেখানে হয় সেখান থেকে অন্য কোন স্থানে ছড়ায় না
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য
* এই টিউমার গুলো কোন আবরন দ্বারা আবৃত থাকে না
* অগোছালোভাবে বৃদ্ধি পায়
* দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বড় হয়ে যায়
* শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সংক্রমণ ঘটায়
* রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে
টিউমার এর লক্ষণ কি
দেহের কোন স্থানে টিউমার হলে তা আমরা স্বাভাবিক চোখে দেখতে পাই অথবা হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করতে পারি। কিন্তু ব্রেইনে টিউমার হলে এইভাবে বুঝা যায় না। তবে ব্রেন টিউমার হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেগুলো হলো -
* শরীরে অতিরিক্ত দুর্বলতা
* প্রচন্ড মাথা ব্যথা
* বমিবমি ভাব
* দৃষ্টি শক্তি কমে যায়
টিউমার কি ব্যথা হয়
না, সব টিউমারে ব্যথা হয় না। কিছু টিউমার কোন সমস্যাই সৃষ্টি করে না। শরীরে টিউমার আছে কি না তা বুঝাও যায় না। আবার কিছু টিউমারে প্রচন্ড ব্যথা হয়। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও কষ্ট হয়।
টিউমারের বিভিন্ন নাম
শরীরের যে স্থানে টিউমার হয় তার উপর ভিত্তি করে টিউমারের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। যেমন -
* এপিথেলিওমা - চামড়া বা ত্বকের উপর টিউমার
* লাইপোমা - ত্বকের নিচে চর্বি সমৃদ্ধ টিউমার
* মাইওমা - পাকস্থলী, জরায়ু প্রভৃতি স্থানের পেশির টিউমার
* প্যাপিলোমা - শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির টিউমার
* গ্লাইওমা - মস্তিষ্কের টিউমার
* অস্টিওমা - হাড় বা অস্থিতে সৃষ্ট টিউমার
* কনড্রোমা - তরুনাস্থিতে সৃষ্ট টিউমার
টিউমার কেন হয়
দেহে কোষের সৃষ্টি বৃদ্ধি এবং বিভাজন যে চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তাকে বলা হয় কোষ চক্র। কোষের ক্রোমোজোমের DNA-তে বিদ্যমান জিন এই কোষ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। কোন কারনে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয়।
টিউমার সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন -
* জেনেটিক
* হরমোনাল
* জীবনযাপন পদ্ধতি
* কসমেটিক সামগ্রী
* জীবানুর সংক্রমণ
* ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি
টিউমার কোথায় কোথায় হয়
টিউমার হওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট অঙ্গ নেই। অর্থাৎ দেহের সকল অঙ্গেই টিউমার হতে পারে। দেহের ত্বকে, হাত-পায়ের মাংসপেশিতে, মস্তিষ্কে, অস্থিতে, নাকে, ডিম্বাশয়ে এবং জরায়ুতে বিভিন্ন ধরনের টিউমার হয়ে থাকে।
টিউমার ভালো করার উপায়
টিউমার একটি ক্রনিক রোগ । চিকিৎসা ছাড়া টিউমার ভালো করার কোন উপায় নেই। অপারেশন করে টিউমার ফেলে দিলেও রোগী সুস্থ হয় না। তাই সেই টিউমার আবার ফিরে আসে একই রূপে অথবা আরও মারাত্মক রূপে।
টিউমার ভালো করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো যথাযথ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করা। টিউমারের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেকগুলো চমৎকার কার্যকরী ঔষধ রয়েছে।
টিউমারের হোমিও ঔষধ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে যেকোন রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হয়। একইভাবে টিউমারে আক্রান্ত রোগীরও চিকিৎসা হয়। এর জন্য ব্যবহৃত অসংখ্য ঔষধের মধ্যে প্রধান ঔষধগুলো হলো -
Antim crud, Baryta carb, Calc carb, Calc fluor, Calc phos, Cistus can, Conium, Graphites, Iodum, Medorrhinum, Natrum mure, Natrum sulp, Phosphorus, Ruta, Silicea, Staphysagria, Sulphur, Teucrium, Thuja ইত্যাদি
একজন যোগ্য দক্ষ প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর সকল লক্ষন বিবেচনা করে হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলো থেকে একটিমাত্র ঔষধ নির্বাচন করেন। এরপর তিনি সেই ঔষধের সঠিক শক্তি নির্বাচন করে তা সূক্ষ্ণমাত্রায় প্রয়োগ করেন। এর ফলে রোগী সুস্থ হয়ে তার টিউমার স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
টিউমারের হোমিও চিকিৎসা
রোগী হাতে টিউমার নিয়ে আসলেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রথমে টিউমার দেখলেন। এরপর তিনি রোগীর সার্বদৈহিক লক্ষণ ও মানসিক লক্ষন জানলেন। তিনি রোগীর জন্য ওষুধ নির্বাচন করলেন ।
তিনি কী লক্ষণ দেখে রোগীকে ওষুধ দিলেন ?
তিনি দেখলেন রোগীর .....
√ জিহ্বা বড় এবং ভারী
√ প্রচুর পিপাসা
√ অতিরিক্ত লালা
√ অতিরিক্ত ঘাম
➤ মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে
➤ স্মরন শক্তি কম
➤ কোষ্ঠকাঠিন্য
➤ মাংস অপছন্দ
তিনি রোগীকে ওষুধ দিলেন Mercurius solubilis . পঞ্চাশ সহস্রতমিক ওষুধ m/2 এবং m/3 খেয়ে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে রোগীর টিউমার ছোট হয়ে গেল। বুঝা যায় আর কয়েক দিনের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ চলে যাবে।
চিকিৎসক শুধু রোগীর রোগ টিউমারের লক্ষণ দেখে ওষুধ দেন নাই। বরং তিনি ওষুধ দিয়েছিলেন রোগীর সার্বদৈহিক লক্ষণ দেখে।
এইভাবে দেহের সকল অঙ্গের সকল টিউমারের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা হবে রোগীর লক্ষন সমষ্টি অনুসারে। তাহলে রোগী সুস্থ হবে আর তার টিউমার স্থায়ীভাবে বিদায় নিবে।
আরও জানার জন্য -
YouTube : Classical Homeopathy
YouTube : Classical Homeopathy
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন